প্রযুক্তিপণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চায় আইসিটি ব্যবসায়ীরা
প্রযুক্তিপণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চায় আইসিটি ব্যবসায়ীরা/
বিসিএস এর উদ্যোগে বুটক্যাম্প অনুষ্ঠিত
০৭ জুন, মঙ্গলবার, ঢাকা : প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনে কাঁচামালের উপর অত্যাধিক শুল্ক ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পণ্য উৎপাদনের অন্তরায় বলে উল্লেখ করেছেন প্রযুক্তি ব্যবসায়ীরা। কিছু কিছু প্রযুক্তি পণ্যের তৈরী পণ্যের শুল্কের চেয়ে কাঁচামালের শুল্ক বেশি। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতিমালাও নেই। যে শিল্প নতুনভাবে শুরু হতে যাচ্ছে সে শিল্পে একক ব্যবসায়ীর কথা রাজস্ববোর্ড আমলে নিচ্ছে না। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)সহ অন্যান্য প্রযুক্তি খাতের সংগঠনগুলোকে এক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা রাখতে হবে।
আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (আইবিপিসি) এবং বিসিএস এর উদ্যোগে আয়োজিত ০৬ জুন সোমবার মুন্সিগঞ্জের ঢালিস আম্বার নিবাস রিসোর্টে বুটক্যাম্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নিজেদের দাবি উত্থাপন করেন বিসিএস সদস্য এবং প্রযুক্তি ব্যবসায়ীরা। বুটক্যাম্পের বিষয় ছিল ‘হার্ডওয়্যার ম্যানুফাকচারিং প্ল্যান রেডিনেস অ্যান্ড প্রিপারেশন’।
বিসিএস সদস্যদের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর হতে বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তনের বিষয় প্রশিক্ষণার্থীরা উল্লেখ করেন। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে শর্তাবলীকে শিথিল করা, বিদেশী বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করার পর সহজেই যেন তার লভ্যাংশ অর্জন এবং নিজ দেশে নিতে পারে এ ব্যাপারেও সহজীকরণ নীতি অনুকরণ করার কথা উল্লেখ করেন প্রযুক্তি পণ্য ব্যবসায়ীরা। ‘বাংলাদেশে তৈরি’ স্লোগানকে প্রতিষ্ঠিত করতে উৎপাদনকারীদের পক্ষে যেকোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিসিএসকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তারা।
বুটক্যাম্পে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বিসিএস মহাসচিব কামরুজ্জামান ভূইয়া। তিনি বলেন, মেড ইন বাংলাদেশ স্লোগানকে সফল করতে আমরা পণ্য উৎপাদনকারীদের নিয়ে এই বুট ক্যাম্প আয়োজন করেছি। প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনে যারা এখন সফলতার সঙ্গে এই খাতকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা নিজেদের বাস্তব অভিজ্ঞতা এই ক্যাম্পে বর্ণনা করবেন। মূলত আমদানিকারক থেকে উৎপাদনকারী হওয়ার জন্য যেসব বাধাগুলো রয়েছে সেইসব বাধাগুলো টপকে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পথ নির্দেশনা পেতে আমাদের এই আয়োজন।
ডালি আম্বার নিবাসে অনুষ্ঠিত বুটক্যাম্পে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিসিএস সহ-সভাপতি রাশেদ আলী ভূইয়া। তিনি বলেন, বিসিএস সদস্যদের পণ্য আমদানি জনিত সমস্যা, উৎপাদনকারী হওয়ার পথে বাধাসমূহ এবং প্রযুক্তি ব্যবসাকে আরো আধুনিক করতে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিতেই আমাদের এই আয়োজন। সরকারের ২০৪১ রুপকল্প বাস্তবায়নে আমাদের চেষ্টা চলমান রয়েছে। দেশকে প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও নিজেদের দাবীগুলো সংগঠনের কাছে পেশ করা উচিৎ। এতে আমরা সদস্যদের সুবিধার্তে দাবিগুলোর ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হবো।
বুটক্যাম্পের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিসিএস সভাপতি ইঞ্জি. সুব্রত সরকার। তিনি বলেন, প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনে যেসব কাঁচামালের প্রয়োজন হয় এবং পাশাপাশি পিসিবি বোর্ডসহ যেসব উপকরণ পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় এসব পণ্যের উপর শুল্কের কোটা শুন্য করা হলে দেশে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। উৎপাদনকারীদের জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিসকে কার্যকর সেবাতে রুপান্তর করতে হবে। এখনো একটি উৎপাদনকারীর লাইসেন্স পেতে ক্ষেত্র বিশেষে ৮ থেকে ২৪ মাস চলে যায়। এতে উৎপাদকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার আগ্রহ কমে যায়।
বুটক্যাম্পে সনি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান, পিসি গার্ডেনের প্রধান কার্যনির্বাহী মো. আহসানুল আলম, সিনকো বিডি’র পরিচালক জিল্লুর রহমান সোহেল, হালিমা গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল কালাম হাসান টগর, কেমেন ইন্দো বাংলা ক্যাবল প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আশিষ কুমার এবং রাকা ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. নজরুল ইসলাম নিজেদের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনে বাধা এবং সম্ভাবনাসমূহ নিয়ে বিষদ আলোচনা করেন।
বিকেলের সেশনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি) এর কো-অর্ডিনেটর মো. আব্দুর রহিম খান। তিনি বলেন, আজকের এই সেশনে তরুণ উদ্যোক্তারা যেভাবে বাধা টপকে এগিয়ে এসেছেন এবং সামনে এগিয়ে যাওয়া দৃঢ় পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন তা থেকেই প্রমাণ হয় আমরা কোন অংশে পিছিয়ে নেই। বাধা আসবেই। এই বাধাকে সাফল্যের পথে নেতৃত্ব দেয়ার অংশ মনে করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। সকলের প্রচেষ্টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত রুপকল্প বাস্তবায়নে আমরা সবাই নিজের সর্বোচ্চটা দিতে সক্ষম হবো বলেই আমরা বিশ্বাস করি। এত সুন্দর আয়োজনের জন্য আমি বিসিএসকে আন্তরিক সাধুবাদ প্রদান করছি।
বুটক্যাম্পের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মুন্সিগঞ্জের কাছে প্রশিক্ষণার্থীরা বিসিএস সভাপতির নেতৃত্বে রাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর প্রিন্টারের টোনার কার্টিজ উৎপাদন কেন্দ্র সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। রাকা ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, মুন্সিগঞ্জেই আমরা বিশ্বমানের প্রিন্টারের টোনার কার্টিজ স্বল্পমূল্য উৎপাদন এবং বিক্রি প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আমাদের প্রিন্টারের টোনার সারাদেশে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও আমরা টোনার কার্টিজ উৎপাদনের ফরমায়েশ পেয়েছি। টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান স্যামসাং আমাদের কারখানা পরিদর্শন করে আমাদের উৎপাদনের পরামর্শ দিয়েছে। পাশাপাশি আমরা অ্যালুমুনিয়ামের পণ্যও উৎপাদন করছি। অ্যালুমুনিয়াম প্রযুক্তি পণ্যে ব্যবহৃত একটি প্রয়োজনীয় উপকরণ। কাঁচামালের উপর শুল্ক হ্রাস বা বাদ দেয়া গেলে দেশেই বিশ্বমানের যেকোন পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব। আমাদের দরকার রাজস্ব বোর্ডের সুদৃষ্টি। আশা করছি বিসিএস আমাদের শুল্ক সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে সরকারের কাছে আমাদের দাবিগুলো যথাযথভাবে উপস্থাপন করবে।
সন্ধ্যার সেশনে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ এবং উৎপাদনকারীদের বিভিন্ন সুবিধার কথা উল্লেখ করে সেশন পরিচালনা করেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের (বিএইচটিপিএ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ। তিনি বলেন, আপনাদের এগিয়ে যাওয়ার গল্প আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। মূলত সরকারের পক্ষে আমি আপনাদের অনুপ্রাণিত করতে চাই। উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হতে সরকার সব ধরণের সুযোগ সুবিধা প্রদান করছে। আমাদের হাই-টেক পার্কগুলোও প্রস্তুত এবং এই বছর আরো হাই-টেক পার্ক কার্যক্রম শুরু করবে।
উদ্যোক্তাদের সুবিধা প্রদান করতে তিনি হাই-টেক পার্কের প্রদত্ত সুবিধা নিয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।